Image

খেলা

জানার আছে অনেক কিছু ফুটবল ম্যাচ কেন ৯০ মিনিটের হয়

Image

কামরুল হাসান

প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৫, ১০:৪২ দুপুর

3
Shares

Image

সত্যি বলতে, এই প্রশ্নের সোজাসাপ্টা কোনো উত্তর নেই। ইতিহাসবিদেরা এর কোনো নির্দিষ্ট কারণ বের করতে পারেননি। ফুটবলের নিয়মকানুন ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব মেনে তৈরি হয়নি। ফুটবলের প্রথম স্বীকৃত নিয়মকানুন প্রকাশ করেন ইংল্যান্ড ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এফএ) প্রথম মহাসচিব এবেনেজার কব মর্লি, ১৮৬৩ সালের ৫ ডিসেম্বর। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার হলো, তাতে ম্যাচের সময়সীমা বা একটি দলে কয়জন খেলোয়াড় থাকবে, সেসবের কোনো উল্লেখই ছিল না। ১৮৫০ ও ১৮৬০-এর দশকে ইংল্যান্ডের শেফিল্ড ছিল বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ফুটবল শহর। বিশ্বের প্রাচীনতম ক্লাব শেফিল্ড এফসি গঠিত হয় ১৮৫৭ সালের ২৪ অক্টোবর। এক বছর পরই এই ক্লাব ‘শেফিল্ড রুলস’ নামে ফুটবলের কিছু নিয়মকানুন প্রকাশ করে, কিন্তু সেখানেও ম্যাচের সময়সীমা বা খেলোয়াড়ের সংখ্যা নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট নির্দেশনা ছিল না। ফুটবল ইতিহাসবিদ অ্যাড্রিয়ান হার্ভি তাঁর গবেষণাগ্রন্থ ‘ফুটবল: দ্য ফার্স্ট হানড্রেড ইয়ারস’–এ লিখেছেন, ১৮৫০-এর দশকের শেষ দিকে শেফিল্ডের ম্যাচগুলোতে প্রতি দলে ২০ জন করে খেলোয়াড় থাকত এবং খেলাটা চলত দুই ঘণ্টা পর্যন্ত। হার্ভির ভাষায়, ‘১৮৬২ সালের দিকেও ম্যাচের সময়সীমা নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম ছিল না। কোথাও এক ঘণ্টা, কোথাও তিন ঘণ্টা পর্যন্ত চলেছে।’ সে সময় শেফিল্ড শহরে ১৫টির মতো ফুটবল ক্লাব ছিল বলে জানা যায়। সেই ক্লাবগুলো মর্লি বা এফএর নিয়মের চেয়ে ‘শেফিল্ড রুলস’ই বেশি অনুসরণ করত।ইতিহাসে প্রথম ৯০ মিনিটের ফুটবল ম্যাচের খোঁজ পাওয়া যায় ১৮৬৬ সালের ৩১ মার্চ। লন্ডনের ব্যাটারসি পার্কে শেফিল্ড এফসির বিপক্ষে সেই ম্যাচে খেলেছিল লন্ডনের ক্লাবগুলোর সম্মিলিত দল। অ্যাড্রিয়ান হার্ভির বইতেই আছে, তখন ৯০ মিনিটে খেলা হওয়াটা যতটা না আলোচিত ছিল, লন্ডনের দর্শক ও খেলোয়াড়েরা এর চেয়েও বেশি মজা পেয়েছিলেন শেফিল্ডের খেলোয়াড়দের হাওয়ায় বল তোলার কৌশল দেখে। শেফিল্ড এফসির ওয়েবসাইট বলছে, ‘ওই খেলা দেখে লন্ডনের দর্শক আর খেলোয়াড়ের হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেয়েছেন।’ ইতিহাসবিদেরা মনে করেন, সম্ভবত ট্রেনে শেফিল্ড থেকে লন্ডন যাওয়া-আসার সময় মাথায় রেখে ওই ম্যাচের সময়সীমা নির্ধারিত হয়েছিল। এর পর থেকেই এই ৯০ মিনিটের রীতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৮৭১ সালে এফএ কাপের প্রথম নিয়মেও তাই লেখা হয়, ‘প্রতিটি ম্যাচের সময় হবে দেড় ঘণ্টা।’ আবার যাঁরা মনে করেন ৯০ মিনিটের এই সময়সীমা নিছকই কাকতালীয় নয়, তাঁদের জন্য ইংরেজ ইতিহাসবিদ ও গবেষক পিটার সেডন তাঁর ‘ফুটবল টক: দ্য ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড ফোকলোর অব দ্য ওয়ার্ল্ডস গ্রেটেস্ট গেম’ বইয়ে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ফুটবল ম্যাচের এই সময়সীমা সংখ্যার প্রতি এক ঐতিহাসিক আসক্তি থেকে এসেছে, যার শিকড় মধ্যযুগ পর্যন্ত বিস্তৃত। মধ্যযুগ থেকেই সময়কে ৬০ মিনিটে ভাগ করে রাখার যে ধারা, তা থেকেই হয়তো এই ৯০ মিনিট এসেছে। সেডনের মতে, আজকাল যেমন ১০০-কে একটা পূর্ণাঙ্গ সংখ্যা মনে করা হয়, ছয় শ বছর আগে সে রকম ভাবা হতো ‘৬০’ সংখ্যাটিকে। এমনকি তিনি টেনিসের অদ্ভুত স্কোরিং সিস্টেমের (১৫, ৩০, ৪০, গেম অর্থাৎ ৬০) ভিত্তিও খুঁজে পেয়েছেন সেখানেই (তাঁর মতে, টেনিসের ৪০ আসলে ছিল ৪৫, পরে তা ‘৪০’ করা হয়। সেটাও এক অদ্ভুত কারণে। ফর্টি ফাইভ বলতে বেশি সময় লাগে, ফর্টি বলতে কম)। সেডন বলছেন, ‘১৫ মিনিটের ভাগ বা তার গুণিতকগুলোকে ঐতিহাসিকভাবে সব সময় “গোছানো” মনে করা হয়েছে।’ সেডনের এই যুক্তিতে একটা ফুটবল ম্যাচের সময় ৯০ মিনিট হওয়াটাকে খুবই যৌক্তিক মনে হতে পারে। কোচরাও তো খেলোয়াড়দের প্রায়ই বলেন, ম্যাচের প্রথম ১৫ মিনিটে রক্ষণ সামলাতে। মধ্যবিরতিও হয় ১৫ মিনিটের। ধারাভাষ্যকাররা যেমন উত্তেজনা বাড়াতে বলেন, ‘ম্যাচের শেষ ১৫ মিনিট চলছে।’ বিখ্যাত ফরাসি কোচ আর্সেন ওয়েঙ্গারও বলতেন, ‘একজন কোচের দৃষ্টিকোণ থেকে, চ্যাম্পিয়নস লিগ ম্যাচের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো শেষ ১০ থেকে ১৫ মিনিট।’ আর ১৫ মিনিটের ছয়টা অংশ মিলেই তো হয় ৯০ মিনিটের একটা পুরো ম্যাচ!

সুত্র: আরটিভি

বাংলাদেশ
আরটিভি
জাতীয়
রাজনীতি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
সারজিস আলম
ডিজিটাল প্রযুক্তি
শ্লীলতাহানি
আওয়ামী লীগ
সমন্বয়ক
শীর্ষ খবর
Image

আরো খবর

ImageImage